17 May 2024, 09:27 am

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নভেম্বরে জাতিসংঘে আলোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগে জাতিসংঘে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরবে সরকার। আগামী নভেম্বরে জেনেভায় অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ’র (ইউপিআর) ৪৪তম অধিবেশনে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বিভিন্ন প্রশ্ন ও মন্তব্যের জবাব দেবে বাংলাদেশ। এর আগে বাংলাদেশ ইউপিআরে তিন দফা মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অবস্থান তুলে ধরলেও আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা থাকায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রসহ অন্যান্য অধিকারের বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর আগ্রহ বেশি থাকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আগামী ৭ আগস্টের মধ্যে ইউপিআরে বাংলাদেশের মানবাধিকার রিপোর্ট জমা দেবে সরকার এবং সেটির ওপরে নভেম্বরে জেনেভায় আলোচনা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘ইউপিআরে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, এজেন্সি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। সবার মতামতের ভিত্তিতে সরকার ৭ আগস্টের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে।’

ইউপিআর কী : ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ (ইউপিআর) জাতিসংঘের মানবাধিকার ব্যবস্থার একটি অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া, যার আওতায় জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রতি সাড়ে ৪ বছর পর পর পর্যালোচনা করা হয়। একইসঙ্গে পরিস্থিতির উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান করা হয়।

জাতিসংঘের সদস্য দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ও তার আচরণ নিয়ে এই ফোরামে আলোচিত হয়। যেহেতু একটি দেশ আরেক দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক অধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলে, সেজন্য ফোরামে কূটনৈতিক বিবেচনা অনেক বেশি গুরুত্ব পায়। এছাড়া সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদেরও বক্তব্য শোনা হয়, এ কারণে তারাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জাতিসংঘে প্রথম ইউপিআর পর্ব শুরু হয় ২০০৯ সালে। ওই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে সরকার। এরপর ২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল দ্বিতীয় পর্ব এবং ২০১৮ সালের ১৪ মে তৃতীয় পর্বে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়।

প্রথম দুই পর্বে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচনায় অংশ নিলেও তৃতীয় পর্বে আইনমন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

বাংলাদেশ নিয়ে কী আলোচনা : ইউপিআরের আলোচনায় বাংলাদেশের যেসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দেশ বার বার সুপারিশ করেছে, সেগুলো হলো— মানুষের জীবন ও নিরাপত্তার অধিকার, মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালীকরণ, জাতিসংঘ মানবাধিকার ব্যবস্থার সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি, নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতন প্রতিরোধ ও প্রতিকার এবং শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত ইউপিআরের প্রথম পর্বে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাষ্ট্র বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য মোট ৪২ সুপারিশ করে। এরমধ্যে বাংলাদেশ দুটি সুপারিশ  গ্রহণ করেনি। ওই দুটি সুপারিশ ছিল— মৃত্যুদণ্ড বাতিল এবং সমকামিতা সংক্রান্ত।

২০১৩ সালে  দ্বিতীয় পর্বে ১৯৬টি সুপারিশের মধ্যে ৫টি সুপারিশ গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ। ওই ৫টি সুপারিশের সবগুলো ছিল মৃত্যুদণ্ড বাতিল ও সমকামিতা সংক্রান্ত। এই পর্বে বাংলাদেশ এমন সুপারিশও গ্রহণ করেছিল, যেখানে বলা হয়েছিল ‘জোরপূর্বক অন্তর্ধান বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের যেকোনও অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করুন।’

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় পর্বে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নতির জন্য মোট ২৫১টি সুপারিশ করা হলেও এরমধ্যে ৭৩টি সুপারিশ বাংলাদেশ গ্রহণ করেনি। কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো— বাংলাদেশ প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে যেসব সুপারিশ মেনে নিয়েছিল, ওই ধরনের কিছু সুপারিশ তৃতীয় পর্বে গ্রহণ করেনি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়— ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী’ শব্দটি রয়েছে, এমন একটি সুপারিশও বাংলাদেশ গ্রহণ করেনি।

রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম : মানবাধিকার নিয়ে জাতিসংঘে যত ধরনের মেকানিজম রয়েছে, তারমধ্যে সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী হচ্ছে ইউপিআর। একইসঙ্গে এটি সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মও। বলা যায়, ইপিআর হচ্ছে আসলে অত্যন্ত সুক্ষ্ম একটি রাজনৈতিক অস্ত্র।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর মো. শহীদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘ইউপিআর একটি রাজনৈতিক বিষয়। এখানে কোনও একটি দেশ অন্য একটি দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক অধিকারগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও নিজস্ব মতাদর্শের দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করে থাকে। তবে কিছু দেশ এটিকে ‘ভূ-রাজনৈতিক অস্ত্র’ হিসেবেও ব্যবহার করে থাকে। ফলে এটি একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া।’’

নির্বাচনের ঠিক আগে ইউপিআরে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এটির গুরুত্ব তখন বেশি থাকবে।’

শহীদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি সব সময় একটি টেস্ট কেস হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এ কারণে আগেও বাংলাদেশ নিয়ে অন্যদের আগ্রহ ছিল এবং এখনও থাকবে।’

বাংলাদেশ যা বলতে পারে : বাংলাদেশ সব সময় গঠনমূলক ও মুক্ত মানসিকতা নিয়ে ইউপিআরে অংশগ্রহণ করেছে। সরকার কখনও দাবি করেনি যে, বাংলাদেশ একটি পূর্ণাঙ্গ ও আদর্শ রাষ্ট্র এবং এর কোনও সমস্যা নেই।

শহীদুল হক বলেন, ‘এখানে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে— সবাইকে বুঝানো যে, দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের যে রাস্তা সেটি ঠিক আছে এবং সেই পথেই দেশের অগ্রগতি হচ্ছে। বিষয়টি অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। এখানে কূটনীতি একটি বড় ভূমিকা পালন করে।’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 5509
  • Total Visits: 738122
  • Total Visitors: 2
  • Total Countries: 1126

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শুক্রবার, ১৭ই মে, ২০২৪ ইং
  • ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
  • ৮ই জ্বিলকদ, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ৯:২৭

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018